শহীদনূর আহমেদ::
চলতি বছরে সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, পথচারীসহ একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি। সড়ক পথে যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগই সংঘটিত হয়েছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক সংঘর্ষে। যার ৯৮ ভাগেরই পরিবহনে লাইসেন্স বা মহা সড়কে চলাচলের অনুমতি নেই।
সড়ক আইন অনুযায়ী এসব যান চলাচল অবৈধ হলেও কর্তৃকের আশকারায় দাপট দেখিয়ে চলছে মহাসড়ক ও আভ্যন্তরীণ সড়কে। সড়ক পথের এই যমদূতের দৌরাত্ম্য বন্ধে বিহীত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সূত্র বলছে, চলতি বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় যতগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার ৫টি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সংঘটিতে হয়েছে শেষ দুই মাসে। সবকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে সিএনজির সাথে বাস, ইজিবাইক-মোটরাইকেল লেগুনা-সিএনজির, ট্রাক-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে।
২৪ জুলাই থেকে ২৬ সেপ্টম্বর পর্যন্ত দুই মাসে সড়কে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
সর্বশেষ ২৬ সেপ্টম্বর শান্তিগঞ্জের পাগলা বাঘেরকোনায় ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে মা মেয়েসহ ৩ জন নিহত হন। নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উকিলপাড়া আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কেশবা প্রিয় (৪০) ও তার মেয়ে প্রথমা চৌধুরী। প্রথমা সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া নিহত হয়েছেন নবীনগর এলাকার সজল ঘোষ (৫০)। কেশবা প্রিয় ও তার পরিবার মূলত হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার নবীপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তারা উকিলপাড়ায় বসবাস করেন। ট্রাক-সিএনজির মুখোমুখির সংঘর্ষের মূল কারণ ছিলো বেপরোয়া গতি। ১৩ সেপ্টম্বর কার ও মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলসে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুই জারিকারক নিহত। তারা হলেন- দোয়ারাবাজার উপজেলার সাউদেরগাঁও এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহিদের ছেলে ছমিরুল হক জুয়েল (৩৮) এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হাছননগর এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সবদর আলী (৩৭)। ৬ আগস্ট সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের বাহাদুরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ ৩ সিএনজি যাত্রী নিহত। নিহতরা হলেন, শান্তিগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান খুশি, তিনি সুনামগঞ্জ শহরের আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে এবং অন্য শিক্ষার্থী শহরের বাঁধনপাড়া এলাকার স্নেহা চক্রবর্তী (১৮)। তিনি সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে সুনামগঞ্জ শহরের বাসায় ফিরছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস গ্রামে। অপর নিহত সিএনজি যাত্রী শফিকুল ইসলাম (৫০) শহরের আলীপাড়ার বাসিন্দা। বাস ও সিএসজির মুখোমুখি সংঘর্ষে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। আর আগে গত ২৪ জুলাই পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৩ জন নিহত। সদর উপজেলার গাগলি নামক স্থানে সিএনজি ও লেগুনার সংঘর্ষে চালকসহ এক শিশু যাত্রী মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- দোয়ারাবাজার উপজেলার ঢুলপশী গ্রামের প্রতুল রঞ্জন চক্রবর্তীর ছেলে সিএনজি চালক প্রদ্যুৎ চক্রবর্তী (৩৫), দিরাই উপজেলার কাদিরপুর ধল গ্রামের হাসান আলীর চার মাস বয়সী কন্যা হুমায়রা। এছাড়াও একই দিন দুপুরে সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের সুবিধপুর এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে খাইরুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। সচেতন নাগরিকরা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অবৈধ সিএনজি ও ইজিবাইকের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল। অপ্রশস্ত সড়কে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ সিএনজি চালিত যান চলাচল করছে। অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক মহাসড়কের চলাচল করার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই চলছে বেপরোয়া এই যান।
সুনামগঞ্জ নিরাপদ সড়ক চাইয়ের সহ-সভাপতি ওবায়দুল হক মিলন বলেন, সুনামগঞ্জের সড়কপথ দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। কারো এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকায়। অবৈধ এই পরিবহনের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযান নেই। যা হয় কেবল আই ওয়াশা ছাড়া কিছুই না।
মানবাধিকার কর্মী নুরুল হাসান আতাহের বলেন, আমরা সড়ক নিরাপদ চাই। সড়কের অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না। কর্তৃপক্ষ কবে সজাগ হবেন।
অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধ অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের টিআই মো. হানিফ মিয়া। এ ব্যাপারে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
অনিরাপদ সড়ক পথ-১
ইজিবাইক সিএনজি যখন সড়কে যমদূত
- আপলোড সময় : ০৫-১০-২০২৫ ০৮:৪৬:১০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-১০-২০২৫ ০৮:৪৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ